![]() |
ছবি: মেহেদির পাতা |
তবে দেখাযাক মেহেদীর যত ভেষজ গুণাগুণ
জন্ডিসঃ আঙুলের মতো মোটা মেহেদি
গাছের মূল অর্ধভাঙা আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে ঘষে দুই চা চামচ পরিমাণ নিয়ে
৮-১০ চামচ ওই চাল ধোয়া পানি মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে দুই বার খেতে হবে। এভাবে
চার-পাঁচ দিন খেলে জন্ডিসে উপশম হয়। এ সময় ডাবের পানি বা আখের রস খাওয়া
যাবে না।
শ্বেতপ্রদাহঃ ২৫ গ্রাম মেহেদিপাতা সিদ্ধ করে সেই
পানিতে উত্তর বস্তি (ডুস দেয়া) দিলে সাদাস্রাব ও অভ্যন্তরে চুলকানি প্রশমিত
হয়। স্থানভ্রষ্ট জরায়ুর ক্ষেত্রেও উপরোল্লিখিত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সুবিধা
পাওয়া যায়।
শুক্রমেহ রোগঃ মেহেদী পাতার রস এক চা চামচ দিনে দুই বার পানি বা দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়।
মাথা ও চুলের বিভিন্ন রোগেঃ চুল
উঠে যাওয়া বা পাকায় একটি হরীতকী ও ১০-১২ গ্রাম মেহেদিপাতা একটু থেতো করে
২৫০ মিলি পানিতে সিদ্ধ করে ৬০-৭০ মিলি থাকতে নামিয়েছেঁকে ঠান্ডা হলে মাথায়
লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া খুশকি দূর করতেও এটি কার্যকর ভূমিকা পালন
করে। প্রাকৃতিক মেহেদীর ভিতরে একপ্রকারের প্রাকৃতিক এসিড রয়েছে যা এন্টি
ফাঙাল, এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা চুলকে লম্বা, উজ্জ্বল ও
স্বাস্থ্যবান করে। এটি চুলপড়াও রোধ করে। প্রাকৃতিক মেহেদী পেস্ট মাথা
ঠান্ডা রাখে ও মাথা ব্যাথা দূর করে। ২৫০ গ্রাম সরিষার তেল একটি পাত্রে
সিদ্ধ করার সময় ৬০ গ্রামহেনা পাতা ক্রমান্বয়ে যোগ করা হয়; তারপর একটি কাপড়
দিয়ে ছেঁকে বোতলে সংরক্ষণ করা হয়। এটি নিয়মিত মাখলে চুলের স্বাস্থ্যবান
বৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরে। এটি মাথার টাকের চিকিৎসারও উপাদান।
স্কীন ও ওরাল ডিজিজঃ অত্যান্ত
উপকারি ভেষজ হেনার পাতা ও ফুল হতে আহরিত তেল অনেক চর্ম-মলম তৈরির
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চামড়ায় ক্ষত, পোড়া ও চামড়ারফ্যাকাসে হলুদ দাগ
চিকিৎসায় অত্যান্ত কার্যকরী ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়। স্কেবিস, চর্মের
চুলকানি জাতীয় ও নখের ফাটার চিকিৎসায় হেনা পেস্টব্যবহার হয়। ত্বকের বিভিন্ন
রোগ যেমন- একজিমা, খোসপাঁচড়া, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন, ঘা, কুষ্ঠু,
শ্বেতী ইত্যাদি রোগে মেহেদিপাতার রসউপকারী। পাতার রস দিনে দুই বার আক্রান্ত
স্থানে লাগাতে হবে। এ ছাড়া যাদের গায়ের বা মুখের চামড়া কুঁচকে ঢিলে হয়ে বা
ঝুলে গেছে, তারা এইপাতার রস দিয়ে তৈরি তেল মাখলে অনেকটা স্বাভাবিক হবে।
গরমকালে যাদের শরীওে ঘাম বেশি হয়ে দুর্গন্ধ হয় তারা বেনামূল মেহেদিপাতা
সিদ্ধপানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন। দেহ হতে পানি হ্রাস প্রতিরোধ করে; আবার
ময়েশ্চার ধারণের ফলে কোন অঙ্গ স্ফিতীর রোধে এক প্রকারডিসল্ভিং ফ্যাক্টর
গঠনে কাজে লাগে। হাত-পা জ্বালায় পাতার পেস্ট পুরু করে লাগিয়ে রাখলে উপকার
পাওয়া যায়। কারণ মেহেদিতে আছেশীতলকারক উপাদান। গর্ভবতী মায়ের ৮ মাসের সময়
তার নাভীসহ গোটা তলপেটে মেহেদীর ভরাট ডিজাইন করলে গর্ভজনিত কারণে
চামড়ারফাঁটা ও দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অন্যান্য রোগঃ মাথাব্যাথা,
জ্বর ও ভিটামিন-বি এর ঘাটতি জনিত পায়ের পাতার জ্বালা পোড়ার ক্ষেত্রে দেহের
তাপমাত্রা কমিয়ে স্বস্তি প্রদান করতে পারে। এর ফুলেরপেস্টের সাথে ভিনেগার
মিশিয়ে কপালে প্রয়োগ করলে রৌদ্রজনিত কারণে মাথা ব্যাথার উপশম হয়। গলা
ব্যাথা উপশমে হেনা পাতা দিয়ে গরম করাপানি দিয়ে কুলকুচা করা যায় বা আক্রান্ত
স্থানে প্রয়োগ করা যায়। অস্থিও জোড়ায় প্রদাহ, ফোলা ও থেতলে যাওয়া অঙ্গে
পাতার পেস্ট স্থানীয়ভাবেপ্রয়োগ করা যায়। মেহেদী পাতার রস ও সরিষার তেল
মালিশ করলে ব্যাথা কমে। মেহেদী পাতার রস গরম করে দুই ফোঁটা করে চার-পাঁচ
দিন কানেদিলে কান দিয়ে পুঁজ পড়া বন্ধ হবে। আবার অনেকে এই পাতার রস দিয়ে
তৈরি তেলও ব্যবহার করে থাকেন। অল্প কয়েকটা পাতা থেঁতো করে, গরমপানিতে ফেলে
রেখে কিছুক্ষণ পরে ছেঁকে সেই পানির ফোঁটা চোখে দিলে চোখ ওঠা রোগ ভালো হয়।
বাকলের রস জন্ডিস, প্লীহা বড় হয়ে গেলে, কুষ্ঠএবং সহজে সারে না এমন চর্মরোগ
নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শরীরে হিমোগ্লোবিন সঠিক পরিমাণে আছে কি
না জানার জন্য মেহেদিপাতাব্যবহার করা হয়। মেহেদিপাতা বাটা হাতের তালুতে
লাগালে রঙটা লালচে আভা দিলে ভালো, না হলে হিমোগ্লোবিন কম আছে বলে ধারণা করা
হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন